হাটু ব্যথা অনেক কারনে হতে পারে রোগী যদি নিজেই শনাক্ত করতে পারে, তাহলে নিজেই সঠিক ডাক্তারের নিকট গিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারেন।

বয়স ও কারন ভেদে হাটুর ব্যথা একেক রকম হতে পারে । প্রাথমিক ভাবে রোগী চিকিৎসা নেয়ার আগে তাকে ডাক্তারের নিকট কিছু কথা পরিস্কার ভাবে বললে তার ভুল চিকিৎসা থেকে সে বেচে যাবেন যেনে নিন কি ধরনের ব্যথা হয় এবং এর কারন কি যাতে করে নিজেরাই নিজেদের সচেতন ভাবে চিকিৎসা করাতে পারি ।

হঠাৎ হাঁটুতে তীব্র ব্যাথা, হাঁটু ভাজ বা সোজা করতে গেলে ব্যাথা, হাঁটু ফুলে যাওয়া, দাঁড়াতে গেলে মনে হচ্ছে হাঁটু ছুটে/বেকে যাচ্ছে,

অযথা কারন ছাড়া হাঁটু আটকিয়ে যাচ্ছে,

নামাজে রুকু-সেজদা দিতে গেলে হাঁটু ভাজ করতে কষ্ট হচ্ছে ,

হাঁটু চিকন হয়ে যাচ্ছে, উচু-নিচু জায়গায় হাটতে গেলে হাঁটুতে অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে এসব কষ্ট গুলো অনুভব হলে ঠিক তখনই মনে করবেন।

এই ধরনের কমন ব্যথা প্রতিদিন মেসেজ পাচ্ছি , আপনি আগে নিজেই বুঝে নিন কি হয়েছে । হাটুর ব্যথার জন্য কিছু কমন অংশ দায়ী যেমনঃ

লিগামেন্ট ও মিনিসকাস ইঞ্জুরি (ACL, PCL & Meniscus Injury) :

আমাদের পুরো শরীরের ওজন বহন করে হাটু আর

হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট থাকে।

লিগামেন্ট হলো ইলাসটিক টিসু যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সাথে যুক্ত করে, জোড়ার শক্তি প্রদান এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

★হাঁটুর লিগামেন্ট গুলো নিম্নরূপ:

১. ACL Ligament : এই লিগামেন্ট আপনার হাঁটুকে সামনের দিকে অতিরিক্ত বেরিয়ে যেতে বাধা দেয়। বিশেষ করে খেলাধুলা করতে গেলে শরীরের মুভমেন্ট করার সময়ে জেন হাটু সামনে বেরিয়ে না পরে সে জন্য এই লিগামেন্ট কাজ করে ।

অনেক সময়ে রোগী এসে

বলেন – খেলাধুলা বা আঘাতের ( দৌড়াতে গিয়ে বা ট্রেনিং এর সময় ) ব্যথা পেয়েছেন ফলে হাটু ব্যথা করছে এক্স রে করিয়েছে কিন্তু কিছু ধরা পরেনি। হাঁটু ফুলে যাচ্ছে বা ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে এছাড়া হাটু সোজা করতে কষ্ট হচ্ছে ব্যথার মেডিসিন, প্লাস্টার করিয়েছিল, ফিজিওথেরাপি বা ব্যয়াম করেছেন কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না ।

তখন প্রাথমিক ভাবে ধরে নেই হাঁটুর ACL Ligament ছিঁড়ে গিয়েছে । এর জন্য প্রয়োজন এম আর আই টেস্ট । যা হাটুর লিগামেন্ট বা (রগ) এর পরিক্ষা করে বুঝা যায় ।

২.PCL – এটিও এ সি এল এর মত কাজ করে তবে PCL হাটুকে মুভমেন্ট এর সময়ে পিছনের দিকে অতিরিক্ত যাওয়া থেকে আটকে রাখে। খেলাধুলা বা দুর্ঘটনার ফলে অনেক সময় এই লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় ফলে হাটুর ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে

৩. MCL- হাঁটুর ভিতর পার্শ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

৪. LCL হাঁটুর বাহির পার্শ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

★লিগামেন্ট ইনজুরির কারণ সমূহ:

ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি খেলোয়াড়দের মাঝে মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট ইনজুরি হয়।. ৭০% ব্যক্তির এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) ইনজুরির সাথে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে।

★লিগামেন্ট ইনজুরির লক্ষণ সমূহ:

১. প্রথমে তীব্র ব্যথা পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে।

২. ব্যথা হাঁটুর বাহির পার্শ্বে এবং পিছনে অনুভূতি হবে।

৩. হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়।

৪. আগাতের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়।

৫. ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না।

৬. দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।

৭. আঘাতের সাথে সাথে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে।

৮. সাথে মেনিসকাস ইনজুরি থাকলে, রোগী বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।

৯. অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুতে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে।

১০. দীর্ঘদিন যাবৎ লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশী শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়।

১১. উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।

১২. হাঁটু অস্থিতিশীল মনে হবে।

★জরুরি চিকিৎসা বা করণীয়:

১. হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

২. বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের বেগে নিয়ে লাগালে ব্যথা বা ফুলা কমে আসবে। প্রতিঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে ইহা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।

৩. হাঁটুতে ইলাসটিক কমপ্রেশন বা স্পিলিন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।

৪. হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফুলা কম হবে।

৫. এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন।

৬. হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম এমন চিকিৎসকের কাছে বা স্টোরে রোগীকে পাঠাতে হবে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা: প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে উঠার পর, হাঁটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে কী কী লিগামেন্ট ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করা যায় এবং এমআরআই এর সাহায্য নিতে হয়।

★প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও করণীয়:

হাঁটুর লিগামেন্ট আপনাআপনি জোড়া লাগে না।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যেমন- কোল্যাটারাল লিগামেন্ট) হাঁটুর পেশীর ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়।

ACL ইনজুরি হলে নতুন করে লিগামেন্ট তৈরি করতে হবে। অনেকে তেমন ক্ষতি হয়নি ভেবে ২-১০ বছর চালিয়ে দেয় ।কিন্তু বুঝতে পারেনা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে হাটুর শক্তি কমে যায় এবং আস্তে আস্তে হাটুর অন্যান্য সমস্যা শুরু হয় তখন অপারেশনে ৩ গুন বেশি টাকা খরচ হয় এছাড়া ভোগান্তি আছেই।

যদি বুঝতে পারেন উপরের কারন গুলো আপনার বা আপনার পরিচিত মানুষ গুলো ভুগছেন তাহলে দেরি না করে একজন হাড়ের বিশেষজ্ঞকে দেখান ।

সেখানে এম আর আই টেস্ট দিবে এটি করে বুঝে নিন কি হয়েছে । কিভাবে নিজে সুস্থ হবেন।

যেকোনো প্রয়োজন হলে ইনবক্সে বিস্তারিত বলুন আমরা আছি আপনার সমস্যা সমাধানে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *